কোন খাবারে কি ভিটামিন আছে জেনে নিন

| |

ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ হলো এক শ্রেণির জৈব যৌগ যা বিভিন্ন খাদ্যে স্বল্প মাত্রায় থাকে এবং জীবের পুষ্টি সাধনে,স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে এবং প্রজননে অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা রাখে। তাই কোন খাবারে কি ভিটামিন আছে এবং কোন খাবারে কি গুন আছে সেটা সবার জানা উচিত।

ভিটামিন আমাদের শরীরে ক্যালোরি বা  শক্তির জোগান না দিলেও যাতে আমরা খাদ্য থেকে পাওয়া ক্যালোরি বা শক্তি ভালো ভাবে ব্যবহার করতে পারি সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

এছাড়াও স্বাভাবিকভাবেই নীরোগ ও সুস্থ শরীরের জন্য আমাদের  দরকার প্রয়োজনীয় ভিটামিন। কিন্তু আমরা এমন কিছু জিনিস গ্রহন করি যা আমাদের শরীরে ভিটামিনের প্রয়োজন স্বাভাবিকের চাইতেও বাড়িয়ে দেয়। যেমন: প্রচুর জাঙ্ক ফুড খাওয়া, রাত জাগা, ধুমপান করা ইত্যাদি। তাই আমাদের উচিত ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার আমাদের খাদ্য তালিকায় সঠিক পরিমাণে রাখা।

এবার আসুন জেনে নেয়া যাক কোন ভিটামিন কি আমাদের  কাজে লাগে আর কোন কোন খাবারে সেসব ভিটামিন পাওয়া যায়ঃ

ভিটামিন এর উপকারিতা:

কাজ বা গুরুত্ব:

  • হাঁড় ও দাঁত তৈরীতে সহায়তা করে।
  • চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখে।
  • ত্বকের কোষ ভালো রাখে ফলে ত্বক মসৃণ থাকে।
  • সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • প্রজনন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখতে ও শরীরের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ভিটামিন এ জাতীয় খাবার :

গাজর, পাকা আম,কাঁঠাল, বেল, পেঁপে, টমেটো, জাম, কলা, কমলা, লাউ, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া, এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। এছাড়া মুরগি ও গরুর কলিজা, দুধ, দই, ডিম, মাছের তেল ও ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।

ভিটামিন বি এর উপকারিতা:

কাজ বা গুরুত্ব:

  • পেশি ও স্নায়ুকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে।
  • হজমে সহায়তা করে।
  • হোমোসিসটিন এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বক সুস্থ রাখে।
  • হিমোগ্লোবিন তৈরীতে ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার:

ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, টমেটো, গোল আলু, চীনাবাদাম, কলা, মাছ,মাংস ও সকল ধরনের খাদ্যশস্যে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।

ভিটামিন সি এর উপকারিতা:

কাজ বা গুরুত্ব :

  • চর্বি ও আমিষ বিপাকে সাহায্য করে।
  • দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে।
  • কোলাজেন নামক আমিষ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে।
  • চামড়া মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে।
  • ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার :

বিভিন্ন টক জাতীয় ফল যেমন : আমলকী, পেয়ারা, আনারস, লেবু, আমড়া, কমলালেবু এছাড়া সবুজ শাকসবজি যেমন: ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসপাতা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা ইত্যাদিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি পাকা ফল অপেক্ষায় কাঁচা ফল ও সবজিতে বেশি থাকে।

ভিটামিন ডি এর উপকারিতা:

কাজ বা গুরুত্ব:

  • দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে।
  • চোখের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে।
  • পেশি সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে।
  • কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।
  • দীর্ঘকালীন মাথাব্যথা কমাতে এবং ওজন হ্রাস (বিশেষত মহিলাদের) করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার :

ডিমের সাদা অংশ,মাশরুম, কমলার জুস  ও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

আরো দেখুনঃ   SMART Food ফসল সমূহের বৈশিষ্ট্য ও পুষ্টিগুণ

ভিটামিন ই এর উপকারিতা:

কাজ বা গুরুত্ব:

  • রক্ত তৈরীতে সহায়তা করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • রক্তক্ষরণ বন্ধে সাহায্য করে।
  • হৃদরোগ,ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, স্টোক ইত্যাদি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার :

সূর্যমুখীর বীজ, কাঠবাদামপেস্তাবাদামচীনাবাদাম, ভেষজ, শুকনো এপ্রিকট, কচুর মুল, পালংশাক, ব্রোকলি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।

ভিটামিন কে:

কাজ বা গুরুত্ব :

  • হাঁড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে।
  • হৃৎপিন্ড ভালো রাখে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্রম ভালো রাখে।
  • ঋতুস্রাবের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার :

সবুজ শাকসবজি যেমন: মটরশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি,পালংশাক, সয়াবিন, দুধ, কলিজা ইত্যাদিতে ভিটামিন কে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।এছাড়া মানব অন্ত্রে অবস্থিত জীবাণুরা ভিটামিন কে তৈরীতে সক্ষম। ভিটামিন কে জাতীয় খাবার অত্যন্ত জরুরি।

উপরুক্ত ভিটামিন ছাড়াও জেনে নেই কোন খাবারে কি ভিটামিন আছে আর এর উপকারিতা কি। খাদ্যে পুষ্টিগুণ এবং কোন খাবারে কি পুষ্টি তা নিম্নে দেয়া হলো।

★ ম্যালিক এসিড — টমেটোতে পাওয়া যায়।
★ ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে — ভিটামিন কে।
★ খিটামিন সি হলো — অ্যাসকরবিক এসিড।
★ আমিষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি — শুটকী মাছ।
★ হাড় ও দাতকে মজবুত করে — ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।
★ কচুশাক বিশেষভাবে মূল্যবান — লৌহ উপাদানের জন্য।
★ সুষম খাদ্যের উপাদান – ৬ টি।
★ দুধে থাকে — ল্যাকটিক এসিড।
★ আয়োডিনের অভাবে — গলগন্ড রোগ হয়।
★ তাপে নষ্ট হয় — ভিটামিন সি।
★ শিশুদের রিকেটাস রোগ হয় — ভিটামিন ডি এর অভাবে।
★ মিষ্টি কুমড়া — ভিটামিন জাতীয় খাদ্য।
★ মিষ্টি আলু — শ্বেতস্বার জাতীয় খাদ্য।
★ শিমের বিচি — আমিষ জাতীয় খাদ্য।
★ সর্বাধিক স্নেহ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান — দুধে।
★ রক্তশূন্যতা দেখা দেয় — আয়রনের অভাবে।
★ দুধের রং সাদা হয় — প্রোটিনের জন্য।
★ ভিটামিন সি এর রাসায়নিক নাম — অ্যাসকরবিক এসিড।
★ প্রোটিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয় — অ্যামাইনো এসিড।
★ কচুশাকে বেশি থাকে — লৌহ।
★ সূর্য কিরণ হতে পাওয়া যায় — ভিটামিন ডি।
★ শরীরে শক্তি যোগাতে দরকার — খাদ্য।
★ সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায় — আয়োডিন।
★ ল্যাথারাইজম রোগ — খেসারি ডাল খেলে।
★ সুষমখাদ্যে শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের অনুপাত — ৪:১:১।
★ সবুজ তরিতরকারিতে সবচেয়ে বেশি থাকে — খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন।
★ সবচেয়ে বেশি পাটাশিয়াম পাওয়া যায় — ডাবে।
★ মাড়ি দিয়ে পুজি ও রক্ত পড়ে — ভিটামিন সি এর অভাবে।
★ মানবদেহের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন — আমিষ জাতীয় খাদ্যে।
★ গলগল্ড রোগ হয় — আয়োডিনের অভাবে।
★ মানবদেহ গঠনে প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি — আমিষের।
★ আয়োডিন বেশি থাকে — সমুদ্রের মাছে।
★ লেবুতে বেশি থেকে — ভিটামিন সি।
★ প্রোটিন বেশি থাকে — মসুর ডালে।
★ চা পাতায় থাকে — ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
★ কচু খেলে গলা চুলকায়, কারণ কচুতে আছে — ক্যালসিয়াম অক্সালেট।
★ রাতকানা রোগ হয় — ভিটামিন এ এর অভাবে।
★ মুখে ও জিহবায় ঘা হয় — ভিটামিন বি₂ এর অভাবে।
★ পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন — ভিটামিন বি ও সি।
★ ডিমের সাদা অংশে যে প্রোটিন থাকে — অ্যালবুমিন।
★ আমিষের কাজ — দেহ কোষ গঠনে সহয়তা করা।
★ মোটামুটি সম্পূর্ণ বা আদর্শ খাদ্য বলা হয় — দুধকে।
★ কোলেস্টরল — এক ধরণের অসম্পৃক্ত অ্যালকোহল।
★ ভিটামিন ডি এর অভাবে — রিকেটস রোগ।
★ অস্থির বৃদ্ধির জন্য পোয়োজন — ক্যালসিয়াম।
★ মলা মাছে থাকে — ভিটামিন এ।

আরো দেখুনঃ   ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

 

প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।

Previous

ঘাড়ে ব্যথা হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় কিছু বিষয়সমূহ

Next

Leave a Comment