কামরাঙা ( কামরাঙা এর english নাম Carambola, অথবা Starfruit নামেও বহুল পরিচিত),স্টার ফল – বা ক্যারাম্বোলা – একটি মিষ্টি এবং টক ফল যা পাঁচ-তারা নক্ষত্রের আকারের হয় । বাংলাদেশ , ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপাইন, ভারত, মালয়েশিয়া, এবং শ্রীলঙ্কা এইসব অঞ্চলের একধরনের স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদের ফল। এই ফল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া,পূর্ব-এশিয়া, দক্ষিণ-প্রশান্ত এবং অংশে খুবই জনপ্রিয় ফল । কামরাঙ্গার রয়েছে নানা গুণ। এর পাতা, কচি ফল সবকিছুই ঔষধির কাজ করে।
কামরাঙার পুষ্টি বিষয়ক তথ্য:
এই ফলটি বেশ কয়েকটি পুষ্টির একটি বিশেষ উৎস – বিশেষত ফাইবার এবং ভিটামিন সি
একটি মাঝারি আকারের (৯১-গ্রাম) কামরাঙা পুষ্টি উপাদান:
- ফাইবার: ৩ গ্রাম
- প্রোটিন: ১ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ৫২% RDI
- ভিটামিন বি ৫: 4% RDI
- ফোলেট: ৩% RDI
- কপার : ৬% RDI
- পটাশিয়াম: ৩% RDI
- ম্যাগনেসিয়াম: ২% RDI
পুষ্টি উপাদানগুলি তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেলেও মনে রাখবেন যে এই পরিবেশনায় কেবল ২৮ ক্যালোরি এবং ৬ গ্রাম কার্বস রয়েছে। কামরাঙ্গা ক্যালোরিতে কম তবে ফাইবার এবং ভিটামিন সি এর পরিমাণ কম। এটির কম ক্যালোরির উপাদান বিবেচনা করে এটি খুব পুষ্টিকর।
কামরাঙা খাওয়ার উপকারিতা:
কামরাঙা ফলের মধ্যে এমন অন্যান্য উপাদান রয়েছে যা এটিকে আরও পুষ্টিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এটি কোরেসেটিন, গ্যালিক এসিড এবং এপিকেচিন সহ স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ যৌগগুলির একটি দুর্দান্ত উৎস ।
এই যৌগগুলিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
এই ফলের মধ্যে উদ্ভিদ যৌগগুলি চর্বিযুক্ত লিভারের ঝুঁকি এবং একটি পরীক্ষায় ইঁদুরের কোলেস্টেরল হ্রাস করতে দেখা গেছে ।
- ভিটামিন বি৯ অর্থাৎ ফলিক অ্যাসিডে ভরপুর এই ফল। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
- কামরাঙায় ভিটামিন সি আঙুর,আম, আনারসের চেয়ে বেশি।
- হজম জনিত সমস্যা জন্য এটি বেশ উপকারী ফল।
- ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। এছারাও এতে কিছু পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস রোগ আছে তারা নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে উপকার পাবেন।
- কামরাঙায় রয়েছে ভিটামিন বি৫ ও ভিটামিন বি৬ প্রচুর পরিমাণে।
- কামরাঙ্গা পাতা ও ডগার গুঁড়া খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় হয়।
- মরাঙ্গার গুঁড়া পানির সঙ্গে রোজ একবার করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়।
- বাতের ব্যথায়ও কামরাঙ্গা বেশ উপকারী।
- শুকনো কামরাঙ্গা জ্বরের জন্য খুব উপকারী।
- কামরাঙ্গার পাতা ও কচি ফলে আছে ট্যানিন, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্ত পরিশোধন করে।
কামরাঙা অপকারিতা:
অধিকাংশ মানুষের কাছেই কামরাঙা বেশ প্রিয় একটি ফল।তবে জানেন কি, এই টক স্বাদের ফলটি খালি পেটে খেলে কিডনির ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে।বিশেষজ্ঞরা বলেন,খালি পেটে কামরাঙা খেলে অনেকের বেলায় একিউট কিডনি ইনজুরি বা হঠাৎ কিডনি বিকল হতে পারে।
শুধু মাত্র খালি পেটে কামরাঙা খাওয়াই নয়, আরও অনেক কারণে একিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে। আর একিউট কিডনি ইনজুরি হওয়ার বিভিন্ন কারণ নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছন ডা. জাকির হোসেন।
বর্তমানে তিনি জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট এ্যান্ড ইউরোলজি কিডনি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
একিউট কিডনি ইনজুরি হওয়ার কারণ কি?
একিউট কিডনি ইনজুরি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতা থেকে হঠাৎ করে একিউট কিডনি ইনজুরি তৈরি হয়। পানিশূন্যতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন : ডায়রিয়া, কালেরা, অতিরিক্ত বমি ইত্যাদি। এছাড়া আরও অনেক কারণে হতে পারে যেমন :র্যাবডোমায়ালাইসিস (পেশির আঘাতের কারণে হওয়া জটিল অবস্থা)।
অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম না করে হঠাৎ তীব্র কোন কাজ করা,খেলাধুলা না করা বা সময় বেঁধে খেলাধুলা করা এমন অবস্থা কাটিয়ে হঠাৎ অনেক দৌড়াদৌড়ি করা এসকল কারণেও একিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে।শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে কোন বয়সেই এটি হতে পারে।তবে শিশুরা যেহেতু এসকল কাজ থেকে বিরত থাকে তাই তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের আশংকা কম।
সড়ক দুর্ঘটনা থেকে পেশিতে আঘাত এখান থেকেও র্যাবডোমায়ালাইসিস হয়ে একিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে।এছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও এই সমস্যা দেখা দেয়।একিউট কিডনি ইনজুরির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সংক্রমণ। যেকোনো সংক্রমণ দেহে বাসা বাঁধলো কিন্তু রোগী চিকিৎসা করল না সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়ে সেপটিসেমিয়া হয়ে বা সেপটিক শক হয়ে কিডনি ফেল হতে পারে।
ইদানীং আমরা আরও কিছু বিষয় দেখতে পাই যেমন :কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধ, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার কারণে এমন হতে পারে। এছাড়া খালি পেটে কামরাঙা খেলে, ২০০ মিলিমিটারের মতো জুস খেলে এই সমস্যা হতে পারে।এর মধ্যে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে যা নিউরোটক্সিসিটি বা বিষাক্ততা তৈরী করতে পারে,যার থেকে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকে।তবে সবার ক্ষেত্রে না কারও কারও ক্ষেত্রে কিডনি ইনজুরিও হতে পারে।
আমাদের দেশে গ্রামের দিকে বিলম্ব ফল নামে আর এক ধরণের ফল পাওয়া যায়। যদি খালি পেটে এটি খাওয়া যায় তাহলে মৃত্যু সহ মারাত্মক ঝু্ঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
<
p style=”text-align: left;”>প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।