ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা – Aloe vera

| |

একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি এলো পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার।

Table of Contents - সুচিপত্র সূচিপত্র দেখুন

ঘৃতকুমারী গাছের বৈশিষ্ট্য:

ঘৃতকুমারী বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত।

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজের এক সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন-এ, সি, ই , কোলিন, ফলিক অ্যাসিড, বি-১, বি-২, বি-৩ (নিয়াসিন) ও ভিটামিন বি-৬ এর দারুণ উৎস এটা। অল্পসংখ্যক উদ্ভিদের মধ্যে ঘৃতকুমারী একটি যাতে ভিটামিন বি-১২ আছে।

প্রায় ২০ ধরনের খনিজ আছে ঘৃতকুমারীতে। এর মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম,আয়রন, কপার ও ম্যাংগানিজ।

ঘৃতকুমারী খাওয়ার উপকারিতা :

হজমি সহায়ক:

নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পানে পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ হয়। ফলে দেহের পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
হয়। তাছাড়া ডায়রিয়া সারাতেও ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ করে।

শক্তিবর্ধক:

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা দেহে ক্লান্তি ও শ্রান্তি আনে। কিন্তু নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস সেবন শরীরের শক্তি যোগানসহ ওজনকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

যারা দীর্ঘকাল ফিব্রোমিয়ালোজিয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর রস দারুণ কাজ করে। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে, যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।

ক্ষতিকর পদার্থের অপসারণ:

দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণে ঘৃতকুমারীর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঔষধির কাজ করে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চাপে থাকি। এছাড়া চারপাশের দূষিত পরিবেশ এবং বিভিন্ন ফাস্টফুড গ্রহণের কারণে নিয়মিত পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করা দরকার। ঘৃতকুমারীর রস সেবনের ফলে শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের মিশ্রণ ও খনিজ পদার্থ তৈরি হয় যা আমাদেরকে চাপমুক্ত রাখতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

প্রদাহ কমায়:

ঘৃতকুমারীর রস হাড়ের সন্ধিকে সহজ করে এবং দেহে নতুন কোষ তৈরি করে। এছাড়া হাড় ও মাংশপেশির জোড়াগুলোকে
শক্তিশালী করে। সেইসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ প্রশমনেও কাজ করে।

ঘৃতকুমারী পাতার রস, শসা ও মধু:

ঘৃতকুমারী পাতার রস বিষাক্ত উপাদানের প্রতি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।

শুক্রমেহেঃ

প্রধাণত যারা শ্লেষ্মাপ্রধান রোগে ভোগেন তাদেরই এ রোগ বেশি হয়। কোঁত দিলে অথবা প্র¯্রাব করলে শুক্রস্খলন হয়, এই সব লোকের ঠান্ডা জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশী দেখা যায়, শুধু এই ক্ষেত্রেই ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫ গ্রাম একটু চিনি মিশিয়ে সকালে বা বিকালে সরবত করে খেতে হবে। অথবা শুধু চিনি মিশিয়েও খাওয়া যায়। ৬/৭ দিন খেতে হবে।

গুল্ম রোগে:

গর্ভ হলে পেটে ব্যথা হয়না, আর গুল্মে প্রায়ই কনকনে ব্যথা হয়। তবে এটা যে গুল্ম তা নিশ্চিত হতে হবে। তাহলে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫/৬ গ্রাম একটু চিনি দিয়ে সরবত করে ৩/৪ দিন খেতে হবে। সামান্য উত্তেজনায় ধাতু/শুক্রাণু স্খলন: যাদের শুক্রাণু পাতলা তাদের জন্য দুই চামচ চটকানো ঘৃতকুমারী পাতার শাষ এবং দুই চামচ চিনি মিশিয়ে শরবত করে ১৫-২০ দিন খেলে পাতলা শুক্রাণু অকারণে স্খলন বন্ধ হবে।

আরো দেখুনঃ   মাইগ্রেনের ব্যথা ? তেজপাতার চা খুবই উপকারী

অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক মাজুরতা (মাসিক) হলে:

ঘৃতকুমারী পাতার শাষকে ভালভাবে চটকে চালুনীতে/ঝাকীতে পাতলা আবরণ করে একবার শুকানোর পর আরেকবার তার উপরেই পাতলা আবরণ লাগাতে হবে। এভাবে কয়েকবার লাগানোর পরেই আমসত্বের মতো তৈরি হবে। মাসিকের সময় ২/৩ গ্রাম পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

পেটের ইস্তিজ্ঞা (মল) পরিষ্কার করতে:

যখন সমস্যা হবে তখন সকালে খালি পেটে টাটকা ঘৃতকুমারী পাতার শাঁস ১০/১৫ গ্রামের মতো ঠান্ডা পানির সাথে হালকা চিনি মিশিয়ে শরবত করে খেলে পুরানো ইস্তিজ্ঞা পরিষ্কার হবে।

অর্শরোগে:

এ রোগের স্বভাবধর্ম কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া। সেটা থাকুক আর নাই থাকুক, এ ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫/৭ গ্রাম মাত্রায় একটু ঘি দিয়ে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দুই বার খেতে হবে। এর দ্বারা দাস্ত পরিষ্কার হবে এবং অর্শেরও উপকার হবে।

চুলের যত্নে :

ঘৃতকুমারী চুলের উজ্জলতা বাড়াতে কন্ডিশনারের কাজ করে। এছাড়া চুল পড়া রোধ এবং খুশকি প্রতিরোধে অসাধারণ এ অ্যালোভেরা।

ঘৃতকুমারী খাওয়ার নিয়ম :

ঘৃতকুমারী / অ্যালোভেরার জেল সাধারণত শরবত করে খাওয়া হয়। আপনি বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ লাগাতে পারেন আবার বাজারেও অ্যালোভেরার জুস কিংবা অ্যালোভেরা গাছ কিনতে পাওয়া যায়।

প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ জেল খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার :

অ্যালোভেরা জেল ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। রোদে পোড়া ত্বকের দাগ দূর করতে, মসৃণ রাখতে, দাগ মুক্ত করতে এবং ত্বকে ব্রণে কমাতে অ্যালোভেরার ব্যবহার করা হয় ।

যাদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল তারা বাজার থেকে কেমিকাল কিনে ব্যবহার না করে `নাইট ক্রিম` হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।

এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় :

ত্বকের মৃত কোষ দূর করার জন্য স্বাস্থকর মাস্ক তৈরি করতে এক চা চামচ ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে নিন। তারপর এক চা চামচ ওটমিলের গুড়া এবং আধা চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এই মাস্ক মুখে আর গলায় লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট ৷ তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।

এলোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম:

একটি পাত্রে ব্ল্যান্ড করা অ্যালোভেরা জেল নিন , নারকেলের দুধ এবং মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালোভাবে প্রস্তুত করুন। এখন ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধোয়ার পর এই মিশ্রণটি চুলে শ্যাম্পুর মতো লাগান। কিছুক্ষণ রেখে দিন এবং তারপর আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা / ঘৃতকুমারী প্রশ্ন এবং উত্তর | Question and Answer: 

প্রশ্ন : ঘৃতকুমারী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কি ?

উত্তর /Answer:  বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি ভেষজ ঔষধি গাছ। ঘৃতকুমারী বহুজীবি ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। 

প্রশ্ন : ঘৃতকুমারী কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর : এলোভেরা গাছ সংগ্রহের জন্ প্রথমেই একটি নার্সারিতে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রশ্ন: এলোভেরা মুখে দিলে কি হয় ?

উত্তর :  অ্যালোভেরা রুক্ষ ত্বক হাইড্রেট ও ময়েশ্চারাইজ করে। 

Previous

মাছের উপকারিতা

সজনে পাতার উপকারিতা ও বিষ্ময়কর ঔষধি গুণ

Next

Leave a Comment