27 C
Dhaka
Tuesday, September 16, 2025
spot_img

সজনে পাতার উপকারিতা ও বিষ্ময়কর ঔষধি গুণ

সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুণ অতুলনীয়।  সজনে একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ। সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেরা।  সজনের কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। এটি খরা সহিষ্ণু ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ। ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত ডালের মাধ্যমে বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। গ্রীষ্মকাল বিশেষত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ডাল রোপণের উপযুক্ত সময়।

সজনে পাতার গুনাগুন: 

বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত করে বলেন এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধি গুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায়  বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ এর পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য শক্তি কি. ক্যাল ৪৩, আমিষ ২.৯ (গ্রাম),  ভিটা-এ ২৬ (মি. গ্রাম), পানি ৮৫.২ গ্রাম,  চর্বি  ০.২ (গ্রাম), জিংক ০.১৬ (মি. গ্রাম), শর্করা ৫.১ (গ্রাম), খাদ্য আঁশ ৪.৮ (গ্রাম), ক্যালসিয়াম ২৪ (মি. গ্রাম), আয়রন ০.২ (মি. গ্রাম),  ভিটা-বি১ ০.০৪ (মি. গ্রাম), ভিটা-এ ২৬ (মি. গ্রাম),  ভিটা-বি২ (মি. গ্রাম) ০.০৪ ভিটামিন-সি  ৬৯.৯ (মি. গ্রাম)।

সজনে পাতার উপকারিতা:

  • প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণবেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান।
    ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
  • এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালংশাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান, যা এ্যানেমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • সজনে শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম অবদান রাখে।
  • মানুষের শরীরের প্রায় ২০% প্রোটিন যার গাঠনিক একক হলো এমাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবোলিজম এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে এমাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের শরীরের যে ৯ টি এমাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবগুলোই এই মরিঙ্গার মধ্যে বিদ্যমান।
  • এটি শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
  • নিয়মিত দৈনিক সেবন শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমকে আরো শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ (Immunity Stimulant) হওয়ার দরুন এটি ‘এইডস’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
  • এটি শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
  • শরীরের ওজন কমাতেও ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।
  • এটি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। পাতা থেকে তৈরি এক টেবিল চামচ পাউডারে ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রণ বিদ্যমান, যা ১ থেকে তিন বছরের শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন সময়ে ৬ টেবিল চামচ পাউডার একজন মায়ের প্রতিদিনের আয়রণ এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
  • এটির এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃত ও কিডনী সুস্থ্য রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও কাজ করে থাকে।
  • সজনে-তে প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান।
  • এতে ৩৬ টির মত এন্টি-ইনফ্ল্যামমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এছাড়াও এটি অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা:

ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা অনন্য। এটি শরীরের ইন্সুলিন তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস রুগীদের উপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সজনে পাতা তাছাড়া সজনে ডাটায় থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, শর্করা, আয়রন এবং খনিজ। এতে থাকা বিভিন্ন প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী এই সজনে পাতা।

সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম | সজনে পাতার পাউডার খাওয়ার নিয়ম :

অফ সিজনে খাওয়ার জন্য আপনি গুঁড়া করে নিতে পারেন । বাছাই করে নিন প্রথমে , পাকা পাতা ফেলে দিন তারপর সজনে পাতাকে আপনি ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে গুঁড়া করে ফেলুন ব্লেন্ডার দিয়ে। মনে রাখতে হবে সজনে পাতা গুঁড়া এর মেয়াদ ৬ পর্যন্ত। এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতা যথেষ্ট আপনার শরীরের পুষ্টির জন্য। প্র্যাগনেন্ট মহিলারা প্রতিদিন ৬ চা চামচ খেলে শরীরের সমস্ত পুষ্টি গুন্ পূরণ করা সম্ভব। খালি পেটে খেলে অনেক উপকারিতা পেতে পারেন।

সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম:

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস পানিতে ১ অথবা ২ চা চামচ খেতে পারেন।
  • রান্নায় তরকারিতে দিতে পারে সজনে গুঁড়া।
  • ডালে দিতে পারেন সজনে গুঁড়া।
  • সালাদে বেবহার করতে পারেন সজনে গুঁড়া।
  • আপনি চাইলে চায়ের সাথেও পেতে পারেন।
  • কাঁচা পাতা খেতে চাইলে সরাসরি সজনে পাতার শাক , ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ড করে শরবত , অথবা আপনি বড়া করেও খেতে পারেন(সরিষা ফুলের বড়ার মতো )।
  • সর্বোপরি আপনার যেভাবে পছন্দ খেতে পারেন এই গুঁড়া।

সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম:

সজনে পাতা গুঁড়া করা খুবই সহজ। সজনে পাতা গাছ থেকে সংরক্ষণ করে রেখে দিবেন না। প্রথমে পাতা ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। তারপর করা রোদে খুব ভালোভাবে শুকিয়ে নিন, নরমালি ২ থেকে ৩ দিন রোদে দিন । এমন ভাবে শুকাবেন জন্যে হাত দিয়ে মুঠ দিলে যেন ভেঙে যায়।তারপর ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করার পর আটা চলার চালনি দিয়ে গুড়াগুলি চেলে নিন। তারপর মোটা গুঁড়া গুলি আবার ব্লেন্ড করুন। গুঁড়া করার পর কাঁচের বয়োমে সংরক্ষণ করুন।

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা:

আপনি মাস্ক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

  • বয়সের ছাপ এবং পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে
  • ব্রণ বা পিম্পল প্রতিরোধে খুবই উপকারী
  • ত্বকের রং উজ্জ্বল করে কারণ এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি
  • সজনে পাতার ব্যবহারে ত্বকের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি হয় যা আপনার ত্বকের সুস্বাস্থ বজায় রাখে
  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের শুস্ক ভাব দূর করে.

সজনে পাতার অপকারিতা:

এতো উপকারিতার পাশাপাশি সজনে পাতার কিছু অপকারিতা রয়েছে। এই পাতায় প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই খুব বেশি পরিমাণ সাজনা পাতা বা মরিঙ্গা পাউডার খেলে খিদে কম হতে পারে , তাছাড়া বদহজম এবং পেটে গ্যাস ও ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা এর সমস্যা হতে পারে।

সজনে পাতার জুস :

সজনে পাতার জুস অনেক উপকারী। আপনি চাইলে কাঁচা সজনে পাতা ব্লেন্ডার দিয়ে জুস বানিয়ে খেতে পারেন , তাছাড়া শুকনা সজনে পাতার গুঁড়া সাধারণত জুস বানিয়ে খেতে হয়। পতিটিদিন এক গ্লাস সাজনার জুস আপনার সারা দিনের প্রফুল্লতা।

FAQ:

প্রশ্নঃ সজিনা পাতার গুড়া কিভাবে খেতে হয়?

উত্তরঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস পানিতে ১ অথবা ২ চা চামচ খেতে পারেন। রান্নার তরকারিতে দিতে পারে সজনে গুঁড়া।
ডালে দিতে পারেন সজনে গুঁড়া।
সালাদে বেবহার করতে পারেন সজনে গুঁড়া।
আপনি চাইলে চায়ের সাথেও পেতে পারেন।
কাঁচা পাতা খেতে চাইলে সরাসরি সজনে পাতার শাক , ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ড করে শরবত , অথবা আপনি বড়া করেও খেতে পারেন(সরিষা ফুলের বোড়ার মতো )।

প্রশ্নঃ সজনে পাতার অপকারিতা কি

উত্তরঃ এতো উপকারিতার পাশাপাশি সজনে পাতার কিছু অপকারিতা রয়েছে। এই পাতায় প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই খুব বেশি পরিমাণ সাজনা পাতা বা মরিঙ্গা পাউডার খেলে খিদে কম হতে পারে , তাছাড়া বদহজম এবং পেটে গ্যাস ও ডায়রিয়ার বা পাতলা পায়খানা এর সমস্যা হতে পারে।

প্রশ্নঃ সজনে ইংরেজি নাম কি?

উত্তরঃ সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেরা বা Moringa oleifera) হচ্ছে Moringaceae পরিবারের।

প্রশ্নঃ Saijan এবং moringa কি একই

উত্তরঃ Saijan এর ইংরেজি নাম হচ্ছে moringa। একই গাছ দুই ভাষায় দুই নাম ডাকা হয়।

প্রশ্নঃ সজনে পাতার রস খেলে কি হয়?

উত্তরঃ সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি , মিনারেল , আইরন এবং খনিজ। এই পাতায় ডায়ারিয়া, কলেরা, আমাশয়, কোলাইটিস, ডায়াবেডিস , রক্তস্বল্পতা , হারের পুরাতন বেথা এবং জন্ডিসের সময় ব্যাপক কার্যকরী । শুকিয়ে গুঁড়া খাওয়ার চাইতে কাঁচা পাতার রস আরও বেশি উপকারী শরীরের জন্য।

প্রশ্নঃ মরিঙ্গা পাউডার কি প্রোস্টেটের জন্য ভালো

উত্তরঃ একটি ল্যাবরেটরি গবেষণায় দেখা গেছে যে মরিঙ্গা প্রোস্টেটের বৃদ্ধি এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং এই ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

2,201FansLike
3,102FollowersFollow
1,250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ