SMART Food ফসল সমূহের বৈশিষ্ট্য ও পুষ্টিগুণ

| |

বর্তমানে এশিয়ায় প্রধান খাদ্য হিসেবে মূলত ধান, গম ও ভূট্টা ব্যবহৃত হচ্ছে, যা খাদ্যের প্রায় ৭০% দখল করে আছে। এছাড়া এই সকল খাদ্য দিনে ৩ বার খাদ্য তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে। এক্ষেত্রে SMART Food খাদ্যসমূহ দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করলে একদিকে যেমন খাদ্যে বৈচিত্র্যতা আসবে, অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণভূমিকা রাখবে।
এছাড়া ২০৫০ সালে উপনীত ৯ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে ।

SMART Food ফসলের প্রকার ও বৈশিষ্ট্য: 

পুষ্টিকর, কৃষকের জন্য লাভজনক এবং জলবায়ূ পরিবর্তনের SMART Food ফসলসমূহ

কাউন Foxtail Millet – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চমাত্রায় ফোলেট (৮৫ মিলি মাইক্রো গ্রাম/১০০গ্রাম) এবং আয়রন (৪-৫মি গ্রাম/১০০গ্রাম) বিদ্যমান।
    এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী;
  • উচ্চমাত্রায় জিঙ্ক (৫-৭ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) রয়েছে যা শিশুদের জন্য জরুরি;
  • বিটা-ক্যারোটিন বিদ্যমান (৬০মিলি মাইক্রো
  • গ্রাম/১০০গ্রাম);
  • গ্লুটেন  মুক্ত;
  • জিআই মান কম, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে;
  • যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যানসার, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে;
  • উচ্চমাত্রায় খাদ্যউপযোগী আঁশ বিদ্যমান;
  • সবচেয়ে খরা সহনশীল ফসল;
  • ফসল উৎপাদনে খুবই কম পরিমাণে পানি প্রয়োজন (৩৫০- ৪০০ মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত, অথচ ধানে প্রয়োজন ১২৫০ মিমি);
  • বর্তমান বাজার মূল্য ভালো (৮০-১০০ টাকা/ কেজি) এবং বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে; এবং
  • জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং দ্রুত বর্ধনশীল।

কাউন Foxtail Millet

বাজরা (Pearl Millet) – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চমাত্রায় ফোলেট (৮৫মিলি মাইক্রো গ্রাম/১০০গ্রাম) এবং আয়রন (৪-৮মি: গ্রাম/১০০গ্রাম); বিদ্যমান। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী;
  • উচ্চমাত্রায় জিঙ্ক (৪.২-৫.৮মি: গ্রাম/ ১০০ গ্রাম) রয়েছে যা শিশুদের জন্য জরুরি;
  • গ্লুটেন   মুক্ত;
  • জিআই মান কম, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে;
  • যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসার, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে;
  • উচ্চমাত্রায় খাদ্যউপযোগী আঁশ বিদ্যমান;
  • সবচেয়ে খরা সহনশীল ফসল;
  • ফসল উৎপাদনে খুবই কম পরিমাণে পানি প্রয়োজনে (৩৫০- ৪০০) মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত অথচ ধানে প্রয়োজন ১২৫০ মিমি);
  • বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে; এবং
  • জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাওয়াতে সক্ষম ও দ্রুত বর্ধনশীল।

বাজরা (Pearl Millet )

চিনা (Proso Millet) – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চমাত্রায় ফোলেট (৮৫ মি:লি: মাইক্রো গ্রাম/১০০ গ্রাম) এবং আয়রন (১০মি:গ্রাম/১০০ গ্রাম) বিদ্যমান। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী;
  • উচ্চমাত্রায় প্রোটিন (১২.৪ গ্রাম/১০০গ্রাম) রয়েছে। যা অন্যান্য দানাদার ফসল থেকে বেশি;
  • এতে নায়াসিন, ভিটামিন-বি বিদ্যমান (৬.৭মিলি গ্রাম/১০০গ্রাম);
  • গ্লুটেন   মুক্ত;
  • জিআই মান কম; যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে;
  • যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসার, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে;
  • উচ্চমাত্রায় খাদ্যউপযোগী আঁশ বিদ্যমান;
  • সবচেয়ে খরা সহনশীল ফসল;
  • ফসল উৎপাদনে খুবই কম পরিমাণে পানি প্রয়োজনে (৩৫০- ৪০০) মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত অথচ ধানে প্রয়োজন ১২৫০ মিমি);
  • বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে; এবং
  • জলবায়ু পরিবর্তনেও খাপ খাওয়াতে সক্ষম ও দ্রুত বর্ধনশীল ।

চিনা (Proso Millet)

জোয়ার (Sorghum) – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চমাত্রায় ফোলেট (৮৫মিলি মাইক্রো গ্রাম/১০০ গ্রাম) এবং আয়রন (১০মি গ্রাম/১০০গ্রাম) বিদ্যমান। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী;
  • উচ্চমাত্রায় প্রোটিন (১২.৪ গ্রাম/১০০ গ্রাম) রয়েছে, যা অন্যান্য দানাদার ফসল থেকে বেশি;
  • এতে ভিটামিন-বি (নায়াসিন) বিদ্যমান (৬.৭মিলি গ্রাম/১০০গ্রাম);
  • গ্লুটেন   মুক্ত;
  • জিআই মান কম; যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে;
  • যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসারহৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে;
  • উচ্চমাত্রায় খাদ্যউপযোগী আঁশ বিদ্যমান; সবচেয়ে খরা সহনশীল ফসল; ফসল উৎপাদনে খুবই কম পরিমাণে পানি প্রয়োজনে (৩৫০- ৪০০) মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত অথচ ধানে প্রয়োজন ১২৫০ মিমি);
  • বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে; এবং
  • জলবায়ু পরিবর্তনেও খাপ খাওয়াতে সক্ষম ও দ্রুত বর্ধনশীল।
আরো দেখুনঃ   জলপাই তেল ও লেবুর রসের মিশ্রণ , উপকারিতা ।

বাদাম (Groundnut) – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চ ক্যালরীসম্পন্ন খাদ্য (৫৮৫ কিলোক্যালরী/১০০ গ্রাম);
  • উচ্চমাত্রায় প্রোটিন (২২.৫গ্রাম/১০০ গ্রাম) এবং ফ্যাট (৪৬.৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম) বিদ্যমান;
  • বাদামে বিদ্যমান ফ্যাটের প্রায় ৪৩-৮০% অলিক এসিড থাকে, যা ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে;
  • উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেশিয়াম খনিজ পদার্থসমূহ রয়েছে;
  • উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন-ই (১০.০৯ মাইক্রো গ্রাম/১০০ গ্রাম) রয়েছে;
  • বাদাম ফোলেট এর অন্যতম উৎস (১৭৫ মিলি মাইক্রো গ্রাম/১০০ গ্রাম);
  • বাদাম কৃষকদের জন্য একটি উপকারী ফসল। কারণ, একদিকে শিকড়ে নডিউল তৈরির মাধ্যমে মাটিতে নাইট্রোজেন যোগ করে, অন্যদিকে সেচ, সার ও বালাইনাশক কম লাগে;
  • বাদামের কান্ড ও শাখাসমূহ গোখাদ্যর জন্য উত্তম প্রোটিন উৎস;
  • বাদাম-এর বাজারের মূল্য ভাল; এবং
  • চরের জমিতে বাদাম চাষ করা যায়।

বাদাম (Groundnut)

ছোলা (Chick pea) – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উচ্চমাত্রায় আমিষ বিদ্যমান (১৬.৭-৩০.৬%) যা দানাদার ফসল হতে ২-৩ গুণ। শিশুদের আমিষের অভাবজনিত কোয়াশিওরকর রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে;
  • ছোলায় মেথিওনাইন অ্যামাইনোএসিড ব্যতীত সকল অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনোএসিড বিদ্যমান। যার কারণে দানাদার খাদ্যর সাথে এর সমন্বয় অত্যন্ত পুষ্টিকর;
  • অন্যান্য ডাল ফসল থেকে ছোলায় ফ্যাটের পরিমাণ বেশি (২.৯-৮.৮%)। এর প্রধান ফ্যাটি এসিড হল ওমেগা-৬ (লিনোলেয়িক এসিড), যা মোট এসিডের ৪৬-৬২%;
  • উচ্চমাত্রায় খাদ্যউপযোগী আঁশ বিদ্যমান (১৯-২৩%);
  • যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসার, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে;
  • ফসল উৎপাদনে খুবই কম পরিমাণে পানি প্রয়োজন;
  • বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে এবং বাজার মূল্য ভালো;
  • বায়ুমন্ডলীয় নাইট্রোজেন মাটিতে যোগ করে ফসলের ৮০% নাইট্রোজেন এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম;
  • ফলন ক্ষমতা ১৩৮৪ কেজি/হেক্টর; এবং
  • জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং দ্রুত বর্ধনশীল।

অড়হড় (Pigeon Pea) – পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • উদ্ভিজ্জ আমিষ (২২%) ও খনিজ পদার্থের (ক্যালসিয়াম ও আয়রন) উত্তম উৎস;
  • মাটিতে নাইট্রোজেন (৪০ কেজি/হেক্টর), জৈব পদার্থ ও ফসফরাস যোগ করে;
  • জীবনকাল : ৯০ দিন থেকে ৩০০ দিন;
  • গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়;
  • অধিক খরা সহনশীল এবং উৎপাদন খরচ কম;
  • জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং দ্রুত বর্ধনশীল;
  • ফলন : ৯৭০ কেজি/হেক্টর
  • অড়হড় গাছের বিভিন্ন অংশ আয়ুর্বেদিয় ঔষধ তৈরিতেব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। যেমন: ফুলের রস ব্রন্কাইটিস,কাশি, নিউমোনিয়া রোগে ব্যাবহার হয়; অড়হড় এর বীজরক্তপাত বন্ধ, কৃমিনাশক, ব্যাথানাশক, অ্যানিমিয়া রোধেকাজ করে; মূল ব্যবহার হয় অ্যালার্জী, কৃমিনাশক, শ্লেষ্মা, বেদনানাশক হিসাবে ; পাতা ব্যবহার হয় কাশি, ডায়রিয়া,দাত ব্যাথা  রোগে ।

অড়হড় (Pigeon Pea)

পুষ্টিকর, কৃষকের জন্য লাভজনক এবং জলবায়ূ পরিবর্তনের SMART Food ফসলসমূহ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

Previous

বাংলাদেশের প্রবীণদের সমস্যা | বার্ধক্য জনিত সমস্যা

শিশুর মেধা বিকাশে ১০০০ দিনের গুরুত্ব

Next

Leave a Comment