26 C
Dhaka
Tuesday, October 14, 2025
spot_img

কিডনি রোগ নীরব ঘাতক !!

দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল কিডনি। কিডনি রোগ খুবই নীরবে দেহের ক্ষতি করে। খুবই জটিল অবস্থায় না যাওয়া পর্যন্ত সাধারণত এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। তাই আগে থেকেই কিডনি রোগের লক্ষণগুলো আমাদের জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেল্থ ডাইজেস্ট আমাদের কিডনি রোগের বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে জানিয়েছে।

কিডনি রোগের লক্ষণ:

১। প্রসাবে পরিবতর্ন :

প্রসাবের পরিবতর্ন হওয়া কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ। কিডনির সমস্যা হলে প্রসাব কম বা বেশি হয় এবং প্রসাবের রং গাঢ় হয়। বিশেষত রাতেই এই  সমস্যা বাড়ে। অনেক সময় প্রসাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না।

২। প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া:

প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া এটি খুব দুশ্চিন্তার বিষয়। এমন হলে অতিসত্বর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

৩। প্রসাবের সময় ব্যথা :

প্রসাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনি সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রসাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে।

৪। মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া:

লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায় যার ফলে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।

৫। দেহে ফোলা ভাব:

কিডনি সাধারণত শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য ও বাড়তি পানি বের করে দেয়। তাই কিডনি রোগ হলে এই ক্ষতিকর বর্জ্য ও বাড়তি পানি বের হতে সমস্যা হয়। এই বাড়তি পানি শরীরে থাকার কারণে শরীরে ফোলাভাব তৈরী হয়।

৬। ত্বকে র‍্যাশ হওয়া:

কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে যা ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি তৈরী করতে পারে।

৭। সবসময় শীত বোধ হওয়া:

গরম আবহাওয়ার মধ্যেও কিডনি রুগীদের শীত অনুভূত হয়। আবার কিডনি  সংক্রামিত হলে কখনো কখনো জ্বরও আসতে পারে।

৮। পিছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া:

কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ হল । কোন কোন রুগীর শরীরে এবং পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হয়।

৯। ছোট ছোট শ্বাস :

এই রোগে ফুসফুসে একধরণের তরল পদার্থ জমা হয় এবং শরীরে প্রচুর রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এসব কারণে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয় , তাই অনেকে ছোট ছোট করে আর আস্তে আস্তে শ্বাস নেয়।

১০। বমি বা বমি ভাব হওয়া:

রক্তে বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাওয়ার কারণে কিডনি রুগীদের বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে ।

কিডনি রোগের প্রধান কারণসমূহ :

প্রধানত তিনটি কারণে কিডনি রোগ হয়ে থাকে।

 ১। ডায়াবেটিস।

 ২। উচ্চ রক্তচাপ।

 ৩। কিডনি প্রদাহ যাকে গ্লুমেরুলো নেফ্রাইস্টিস বলা হয়।

কিডনি রোগ উপসর্গ:

কিডনি রোগ এমন লক্ষণগুলি তীব্র হয়ে উঠা অবধি সহজেই নজরে আনা যায়। নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি হ’ল আগাম সতর্কীকরণের লক্ষণ।

  • প্রস্রাবে রং পরিবর্তন ( লালটে হলুদ ), ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা করা
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • দেহে ও পায়ে ফোলা ভাব
  • মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া
  • সবসময় শীত বোধ হওয়া
  • ত্বকে র‍্যাশ হওয়া, শুষ্ক, খসখসে ত্বক
  • বমি বা বমি বমি ভাব
  • ছোটো ছোটো শ্বাস
  • কোমরের উপরে পেছনে ব্যথা
  • ঘুমাতে সমস্যা

নিচের লক্ষণ গুলি কারো থাকলে বুঝতে হবে যে আপনার কিডনি ড্যামেজের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

  • বমি বমি ভাব
  • ক্ষুদা মন্দা
  • প্রস্রাব আউটপুট পরিবর্তন
  • রক্তাল্পতা (লাল রক্ত কোষের হ্রাস)
  • সেক্স ড্রাইভ হ্রাস
  • পটাসিয়ামের মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি (হাইপারক্লেমিয়া)

কিডনি রোগের পরীক্ষা ও কিডনি রোগ নির্ণয় :

এই তিনটি কারণে আমাদের দেশে ৮০% মানুষের কিডনি বিকল হয়। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধুমপান, স্থূলতা ও ব্যায়াম না করা। আবার আমরা যে অ্যান্টিবায়েটিক খাই এগুলো থেকেও হতে পারে। এছাড়া কম পানি পান করা, কিডনিতে পাথর হওয়া এবং বংশগত কিছু রোগ এসব কারণেও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ৭০-৮০ ভাগ কিডনি বিকল হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না।

তাই রোগ নির্ণয়ের জন্য দুটি পরীক্ষা করা হয়।

  1. প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখা হয় যে রক্তে অ্যালবুমিন আছে কি না।
  2. রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে দেখা হয় ১০০ ভাগের মধ্যে কিডনি কত ভাগ কাজ করছে।

এই দুটি পরীক্ষা যদি করা হয় তাহলে আগেই রোগ নির্ণয় করা যাবে। বিশেষত যাদের বয়স ৪০ এর উপরে,যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যারা ধুমপান করে,যাদের ওজন বেশি,যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ খাচ্ছে, যাদের সংক্রমণ হয় ঘনঘন, যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে এরা যদি বছরে দুইবার এই পরীক্ষাগুলো করে, তাহলে তারা প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে পারবে কিডনিতে রোগ আক্রমণ করছে কিনা। বাংলাদেশের সব হাসপাতালে এই পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে।  এসব পরীক্ষা তেমন ব্যয়বহুল ও নয়।

কিডনি রোগ থেকে বাচার উপায়:

১। পানি :

প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস  (২ লিটার ) বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রেবেশি পানি পান করা প্রয়োজন।

২। প্রচুর ফল ও সবজি:

দানা বা বীজ জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে যেমন: ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি। প্রতি সপ্তাহে ১ টি করে ডাবের পানি পান করুন । প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুনি পাতা খেতে হবে। শশা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, মাল্টা, ডালিম, লেবু, বীট, গাজর, আখের রস, বার্লি, সজনা, পিঁয়াজ ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে হবে।

৩। গোক্ষুর :

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের প্রসাবের পরিমাণ কমে যায় ও হাত পায়ে পানি জমে তারা নিয়মিত তিন গ্রাম পরিমাণ গোক্ষুর সেবন করলে মূত্রের পরিমাণ ঠিক হয়ে যায় এছাড়া শরীরে জমে থাকা পানি বা ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

৪। রক্তচন্দন :

রক্তচন্দন কিডনি রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভেষজ। এটি ডাইরুটিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রসাবের জ্বালাপোড়া বন্ধ করে এবং প্রসাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

৫। পাথরকুচি :

গবেষণায় দেখা গেছে, পাথরকুচি পাতার নির্যাস কিডনি পাথরি ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৬। জুনিপার বেরিস:

এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

কিডনি রোগীর খাবার:

ফুলকপি, ব্লুবেরি, সামুদ্রিক মাছ ওমেগা ৩, লাল আঙ্গুর, ডিমের সাদা অংশ, রসুন, জলপাই তেল, বাঁধাকপি, চামড়াবিহীন মুরগি, বেল মরিচ, পেঁয়াজ, আরুগুলা, বাদাম, মূলা, শালগম, আনারস, ক্র্যানবেরি, মাশরুম,

কিডনি রোগীর অবশ্য বর্জনীয় খাদ্যসমূহ:

চকলেট, চকলেট দুধ, পনির, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগীর মাংস, সস, ব্রোকলি, মাশরুম, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, টমেটো, কলা, খেঁজুর ও আচার ইত্যাদি।

<

p style=”text-align: justify;”>প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন swasthakotha@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

2,201FansLike
3,102FollowersFollow
1,250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ