বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের অনেক রোগ দেখা দিতে পারে। তার মাঝে অন্যতম যৌন রোগ সাদাস্রাব । যা নারীদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। আর সব চেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের নারীরা বেশির ভাগই এই ব্যাপারে সচেতন নয় যার জন্যে তাদের প্রতিনিয়ত যৌন সমস্যাতে পড়তে হয়।
অনেকেই জানেই না যে তার যৌন রোগ হয়েছে। মেয়েরা যদি কিছু কিছু লক্ষণ বুঝতে পারে তাহলে সহজেই ধরতে পারবে যে তার যৌন সমস্যা হয়েছে।মেয়েদের সাধারণ যৌন সমস্যা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
ঋতু স্রাব সমস্যা, সাদা স্রাব, তলপেট ও কোমরে ব্যথা
ঋতু স্রাব সমস্যাকে নিম্নের তিন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
- একদমই মাসিক না হওয়া।
- অনিয়মিত মাসিক হওয়া , আর হলেও অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকে।
- অতিরিক্ত রক্তস্রাব হওয়া যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
আমাদের দেশের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ নারীদের মাসিক সময় মতো হয় না। আবার অনেকেরই রক্ত স্রাব হয়ে থাকে। যা কোন কোন সময় অধিক পরিমানে হয়। আর যে নারীদের মাসিক নিয়মিত হয় তাদের বুঝতে হবে যে তাদের ডিম গুলি সময় মতো এবং ঠিক মতো ফুঁটছে। চিকিৎসকেরা মনে করেন এর প্রধান কারণ হলো অসচেতনতা, অজ্ঞতা।
আমাদের দেশে অনেক মেয়েরাই জানে না যে আসলে মাসিকের স্থায়িত্ব কাল কত দিন। আর তার জন্যে দুশ্চিন্তা বেশি হয়। কোন কোন সময় মানসিক কারণেও বেশি হতে পারে রক্ত স্রাব। আবার অন্যান্য কারণেও বিভিন্ন প্রচুর পরিমাণে রক্তস্রাব এবং দীর্ঘস্থায়ী স্রাব হতে পারে।
জরায়ুর মুখে মাংস বেড়ে যাওয়া, যোনিপথে প্রদাহ, ডিম্বের থলিতে টিউমার ইত্যাদি হলো দীর্ঘস্থায়ী স্রাবের আরো কারণ এছাড়া যদি রক্তের মধ্যে কোনো রোগ থাকে যেমন হেমোফাইলিয়া, পারপুরা তাতেও বেশি স্রাব হতে পারে।
এই ধরণের রোগ বেশির ভাগই মানসিক তাই ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মেয়েই কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। শুধু মাত্র ডাক্তার এর পরামর্শ আর নিয়ম করে খাবার খেলেই উপশম হওয়া সম্ভব। কিন্তু চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া খুব জরুরি।
পিরিয়ডের সময় কোন কোন খাবার খাওয়া একদম ঠিক না:
- ফ্যাট যুক্ত খাবার পিরিয়ডের সময় না খাওয়াই ভালো।
- পিরিয়ডের সময় মিষ্টি খাবার খাওয়া উচিৎ না।
- এই সময় লবণ কম খাওয়া উচিৎ।
- জাঙ্ক ফুড খাবেন না।
- খালি পেটে একেবারেই উচিৎ না।
পিরিয়ডের সময় কোন কোন খাবার খাওয়া ঠিক:
- ফাইবার, টাটকা শাক সব্জি এসব খাওয়া উচিৎ।
- টাটকা খাবার খাওয়া উচিৎ।
- দিনে খুব বেশি চা, কফি, কোমল পানীয় না খাওয়াই ভালো।
- এই সময় অ্যালকোহল খুব ক্ষতিকারক।
- দুধ জাতীয় খাবার যেমন, পনির, চিজ, আইসক্রিম এগুলি খুব বেশি খাওয়া ঠিক না।
- এই সময় টাটকা শাকসবজি, ফল, ও ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া খাওয়া উচিৎ।
- এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। চাইলে, হালকা কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে।
- এ সময় প্রচুর পান ফল খেতে হয়।
তলপেট ব্যথা:
শতকরা ৯০ ভাগ মেয়েরা মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হয়। যারা দু-তিন দিন আগে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে তাদের সাধারণত অ্যান্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক অ্যাডিহিসন, জরায়ুতে যক্ষ্মার জন্য হতে পারে। এই ধরণের রোগীদের ডাক্তার এর পরামর্শ এবং চিকিৎসা নেয়া উচিৎ।
পিরিয়ডের ব্যথায় প্রশান্তি পাবার উপায় :
- তলপেট ব্যথায় গরম পানির সেঁক নিলে পেট ব্যথায় বেশ আরাম পাওয়া যায়।
- পেট ব্যথা শুরু হলে কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। মনোযোগ সরিয়ে নিন। চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, বাঁধাকপি, আম ইত্যাদি, ভিটামিন বি১ ডিম, মাছ, সবুজ সবজি, গম ইত্যাদি, ভিটামিন বি৬ ,ভাত, মাছ, ও টমিল, কলা ইত্যাদি, খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- সুবিধাজনক অবস্থানে শুয়ে থাকুন, এক পাস হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাজ করে বুকের কাছাকাছি এনে শুয়ে থাকলে আরাম পাওয়া যায়।
- তাই পার্লারে গিয়ে শরীর ম্যাসাজ করিয়ে নিতে পারেন।
সাদা স্রাব:
- জরায়ুতে ব্যাকটেরিয়া জন্মালে সাদা স্রাব হয় ।
- তলপেট সবসময় ভারি হয়ে থাকে।
- শরীর দুর্বল লাগে । চোখের নিচ গর্ত হয়ে যায়, চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে যায় । মুখের মলিনতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
- দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া এবং যৌনাঙ্গে চুলকানি বা তলপেট ও যোনিতে ব্যথা হতে পারে।
সাদাস্রাব প্রতিরোধে করনীয়ঃ
- কখনও খালি পেটে থাকা যাবে না।
- জরায়ু চুলকালে কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবন দিয়ে, জরায়ুর মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- ১০০ ভাগ সুতি অন্তর্বাস হতে হবে।
- সাদাস্রাব সমস্যা রোধ করার জন্য কলা খুব ভালো।
- ঢেড়স সুস্বাদু সবুজ সবজি এবং সাদাস্রাব সমস্যা রোধ করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
সাদাস্রাব স্বাভাবিক সমস্যা। এটি নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। বরং মানসিক সমস্যা সমাধান সাদা স্রাব থেকে মুক্তি দিতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।