শিশুর জল বসন্ত রোগ এবং বসন্ত রোগের চিকিৎসা

| |

শিশুর জল বসন্ত বা চিকেন পক্স খুব ছোঁয়াচে ভাইরাসজনিত অসুখ। বসন্ত কালের আগমনের সাথে সাথে এই রোগ দেখা যায়। এই রোগের জন্য দায়ী জীবাণু হলো হারপেস জাতের ভেরিসেলা ঝোসটার ডিএনএ ভাইরাস। তবে জল বসন্ত রোগ যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। বয়সের মানুষের হতে পারে। 

বসন্ত রোগের লক্ষণ :

চিকেন পক্স সাধারণত শিশু বয়সে বিশেষত ২ থেকে ৮ বছর বয়সে বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা হাঁচি কাশির সাহায্যে বাতাসের সাথে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। কখনো বা রোগীর ব্যবহৃত সামগ্রী থেকেও এ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে থাকে।
পরিবারের সদস্যদের কারও মধ্যে এ অসুখ দেখা দিলে অন্য সদস্যদের মধ্যে তা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে প্রায় ৯০ শতাংশ। এই রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে অসুখের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথম কয়েকদিন শারীরিক ক্লান্তি, ম্যাজমেজে ভাব,মাথা ব্যথা, জ্বর, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
তারপর শরীরে দেখা দেয় দানাদার ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ এক থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত  র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গগুলো সাধারণত থাকে না সরাসরি  র‍্যাশ দিয়েই রোগের প্রকাশ ঘটে। ঐই র‍্যাশ সাধারণত খুব চুলকানো প্রকৃতির হয়। ম্যাকিউল, পেপিউল ও ভেসিকুলার এই বিভিন্ন প্রকারের র‍্যাশ শরীরে দেখা দেয়। এই বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত র‍্যাশ গুলো চেহারা, বুকে, পিঠে বেশি নজর কাড়ে। এছাড়া চোখে,মুখ গহ্বরের ভেতর, হাত ও পায়ের তালুতেও হতে পারে।

জটিলতা :

স্বাভাবিকভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে চিকেন পক্স তেমন গুরুতর সংকট সৃষ্টি করে না। কিশোর, যুবক বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই রোগের জটিলতা দেখা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা দেয়।
তবে শিশু যদি অন্য কোন অসুখে ভোগা রোগ প্রতিরোধক ঘাটতি জনিত অবস্থায় থাকে তাহলে এই রোগের জটিলতা দেখা দিতে পারে।চিকেন পক্স জনিত তীব্র জটিলতা সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেপসিসনিউমোনিয়া, এনকেফালইটিস।

বসন্ত রোগের চিকিৎসা :

  • বাচ্চার স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যাওয়া,পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ভীষণ চুলকানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করা।
  • এই রোগে শিশুকে কখনোই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। এতে ” রি-ই সিনড্রোম ” নামক জটিল অসুখ দেখা দিতে পারে।
  • সেপসিস,নিউমোনিয়া বা এনকেফালইটিস এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা।
  • অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ বা এসাইক্লোডির ওষুধ বা ইম্যুনোগ্লোবিন  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।

বসন্ত বা হাম রোগের টিকা : 

বাজারে শিশুর জলবসন্ত বা চিকেন পক্স প্রতিরোধের কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায় যেটি দামি হলে ও নিরাপদ। বেশ কিছু দেশে রুটিন মেনে শিশুকে ১২-১৮ মাস বয়সের মধ্যে চিকেন পক্স প্রতিরোধক ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ ঘটার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সুফল পাওয়া যায়।

বসন্ত রোগের হোমিও চিকিৎসা:

  • প্রথমাবস্থায় দুর্বলতায় ,গায়ে ব্যাথা ও উচ্চজ্বরে – Baptisia Q
  • অস্থিরতায় , পিঠে ভীষণ ব্যাথা ও মাথাযন্ত্রণা– Cimicifuga 30 ।
  • যদি প্রচণ্ড সর্দি কাশি থাকলে প্রথমে Bryonia 30 ও পরে Antim Tart 30 ।
  • গুটিতে পুঁজ ও জ্বরে – Marc Sol 30 ।
  • দুর্গন্ধ, মুখে লালা,গলক্ষত,থাকলে – Marc Vivus 30 ।
  • চুলকানি ও মুখ ফোলা থাকলে – Sulphur 30 অথবা Apis mel 30 ।
  • গুটি পচবার সময় – Arsenic Iod 30।
  • গলায় ঘা , মুখেও ব্যাথা – Rhus tox 30 ।
  • যখন মামড়ি পঁচবে – Kali sulph 30।
  • আরোগ্য অবস্থায় শরীরের অত্যন্ত দুর্বলতা দূর জন্য – China 30 ।
  • আক্রান্ত অবস্থায় যদি জ্বর থাকলে বায়োকেমিক ওষুধ Ferrum Phos 6x ও Kali mur 6x পর্যায়ক্রমে সেবন করবেন করতে থাকবেন ।
আরো দেখুনঃ   থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

একেবারে সুস্থ হবার পর শরীর থেকে রস দূর করার জন্য প্রায় ২ থেকে ৩ মাস Rhus tox 30 নিয়মিত সেবন করবেন। ধীরে ধীরে বসন্ত রোগ সেরে যাবে। 

প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।
Previous

স্বাস্থ্যঝুঁকি তে ১৪০ কোটি মানুষ: ডব্লিউএইচও

দাঁতের যত্নে নারকেল তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন?

Next

Leave a Comment