গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও গর্ভবতী নারীর যত্ন

| | ,

সকল মেয়ের কাছেই গর্ভধারণ একটি অতি কাংখিত ব্যাপার।একটা মেয়ে যখন প্রথম বারের জন্য গর্ভধারণ করে তখন তার কাছে প্রায় সব কিছুই অজানা থাকে, এই সামান্য অজানা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক সময় মায়ের উপর নানা ধরনের কুসংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এজন্য গর্ভধারনের পরপরই একটি মেয়ের প্রথম করণীয় একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া।এতে যে শুধু হবু মা-ই সুস্থ থাকবে তা নয়,গর্ভের শিশুটির নিরাপত্তা ও এর সাথে জড়িত। তাছাড়া মায়েদের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার খাওয়া প্রয়োজন। 

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা (প্রতিদিন):

  • রুটি/ব্রেড ৩টি (মাঝারি)। 
  • ডিম ১টি। 
  • সবজি (শিম, কুমড়া) ২.৫ বাটি (আড়াই বাটি)। 
  • ফল (আমড়া, কমলা, পেয়ারা ইত্যাদি) ১টি (মাঝারি)। 
  • দুধের তৈরি খাবার ১ বাটি। 
  • ভাত ৫ বাটি। 
  • ডাল ২ বাটি (ঘন)। 
  • শাক (লাল শাক, মিষ্টি আলুর শাক) ১/২ বাটি। 
  • মাছ/ মাংস ৪ টুকরা। 
  • ফলের রস ১ গ্লাস। 
  • কলা/ আম (পাঁকা) ১টি (মাঝারি)। 
  • দুধ ১ গ্লাস। 
  • খাবার তেল ৫ চা চামচ। 

গর্ভবতী নারীর যত্ন: 

সাধারণভাবে এই সময়টায় মা যদি অল্প কিছু নির্দেশনা মেনে চলে তাহলে গর্ভের শিশুটির নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত করা যায়। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা। গর্ভকালীন যত্ন বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে পারে। আসুন সেই রকমই কিছু বিষয় আমরা জেনে নেই।

১। খাদ্য:

এইসময় মাকে সহজপাচ্য, পুষ্টিকর ও অধিক আমিষযুক্ত খাবার খেতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় শাকসবজি যেন এমন পরিমাণে থাকে যাতে ভিটামিনের অভাব দেখা না দেয়। একজন ৫০ কেজি ওজনের মায়ের জন্য আদর্শ খাবারের কমপক্ষে ২৫০০ কিলোক্যালরি শক্তির যোগান থাকতে হবে। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।

২। ঘুম ও বিশ্রাম :

একজন গর্ভবতী মাকে একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেবার জন্য প্রয়োজন রয়েছে বাড়তি ঘুম ও বিশ্রামের। দিনে নিয়মিত দুই ঘণ্টা ঘুমসহ দৈনিক কমপক্ষে দশ ঘণ্টা ঘুমানো একজন  গর্ভবতীর জন্য আবশ্যকীয়।

৩ । কোষ্ঠকাঠিন্য :

খেয়াল রাখতে হবে মায়ের যেন কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়,এতে গর্ভের শিশুটির  উপরও চাপ পরতে পারে। এজন্য নিয়মিত মলাশয় খালি করতে হবে।এছাড়া এই সময়ে  বেশি বেশি শাকসবজি খেলে এ সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৪। স্তন :

এই সময় স্তন সামান্য বড় হতে পারে এবং স্তনের বোটায় কিছু পরিবতর্নও পরিলক্ষিত হতে পারে।এছাড়া স্তন সামান্য টনটন করাটাও স্বাভাবিক। তাই এসকল বিষয় মাথায় রেখে স্তনের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

৫। যৌন মিলন:

গর্ভের প্রথম তিনমাস যৌন মিলন না করাটাই উত্তম। এছাড়া গর্ভের শেষ ছয় সপ্তাহও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা উত্তম। তবে এ নিয়ে কোন সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিশেষভাবে মিলন করা যেতে পারে।

৬। ভ্রমণ :

সম্ভব হলে গর্ভের প্রথম তিনমাস ও শেষ তিনমাস ভ্রমণ না করাটাই উত্তম।

৭। গোসল ও পোষাক:

এই সময় দৈনিক গোসল করার অভ্যাস করতে হবে এবং এই সময়ে ঢিলেঢালা পোষাক পরিধান করাটাই আরামদায়ক বলে বিবেচিত।

৮। ধুমপান:

এই সময় কোন অবস্থাতেই মায়ের ধুমপান করা যাবে না,এমন অভ্যাস থাকলে সন্তানের ভালোর জন্য ঐ মুহুর্তে  সেটা পরিত্যাগ করতে হবে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলার সামনে কেউ ধুমপান করলেও সেটি গর্ভজাত শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভাবস্থায় ধুমপান ও মদ্যপান শিশুর স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরো দেখুনঃ   শিশুর মেধা বিকাশে ১০০০ দিনের গুরুত্ব

৯। বিবিধ :

পায়ে পানি আসা,প্রসাব কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, পেটের উপর দিকে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী নারীর পুষ্টি ও সেবা:

  • প্রতিদিন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাক সবজি, ফলমূল স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুন পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত
    খাবার শিশুর জন্য মায়ের দুধ তৈরি করতে সহায়তা করে এবং মায়ের নিজের শরীরের ঘাটতি পূরণ করে;
  • গর্ভবতী নারীর কাজে পরিবারের সকল সদস্যদের সহযোগিতা করতে হবে;
  • গর্ভবতী নারীকে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন: ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল এবং সবুজ,
    হলুদ ও কমলা রঙের শাক-সবজি ও ফলমূল ইত্যাদি ও প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের রস পান করতে হবে;
  • ঢিলে-ঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে; এবং

গর্ভবতী মায়ের টিকা:

গর্ভের শুরুতেই টিটেনাস এর টিকা নেওয়াটা জরুরী। এতে সন্তানের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্ত না নিলে প্রসবের সময় ঝু্ঁকির সম্ভাবনা থেকে যায়। যাদের বয়স ১৫ থকে ৪৯ বছর, তাদের জন্য ধনুষ্টঙ্কার ও রুবেলার বিরুদ্ধে টিটি ও এমআর টিকা দেয়া হয়।

কিছু মারাত্মক রোগ আছে, যা মায়ের গর্ভ থেকেই শিশুর শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে । হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইডস এমন কিছু রোগ।

টিটেনাসের ৫টি টিকার ডোজ সম্পন্ন থাকলে আর গর্ভাবস্থায় এই টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর কেউ যদি কোনো টিকা না নিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ৫ মাসের পর ১ মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি টিটি টিকা দিয়ে নিতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের টিকা মা ও বাচ্চা উভয়েরই ধনুষ্টংকার রোগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে। প্রসবকালে পরিচ্ছন্নতায় অসতর্কতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অপরিষ্কার ব্লেড,ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করলে (বাচ্চার নাভী কাটার সময়) তাছাড়া নাভীর গোড়ায় নোংরা কিছু লাগিয়ে দিলে নবজাতকের ধনুষ্টংকার রোগ হয়।

ডোজ টিকা কখন দেবেন:

  • প্রথম ডোজ টিটি ও এমআর ১৫ বছর বয়সে।
  • দ্বিতীয় ডোজ টিটি প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পরে।
  • তৃতীয় ডোজ টিটি দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পরে।
  • চতুর্থ ডোজ টিটি তৃতীয় ডোজের ১ বছর পরে।
  • পঞ্চম ডোজ টিটি চতুর্থ ডোজের ১ বছর পরে।

বুকের দুগ্ধদানকারী নারীর খাবারের তালিকা (প্রতিদিন):

  • রুটি/ ব্রেড ৩টি (মাঝারি)। 
  • ডিম ১টি। 
  • সবজি (শিম, কুমড়া) ২.৫ বাটি (আড়াই বাটি)। 
  • ফল (আমড়া, কমলা, পেয়ারা ইত্যাদি) ১টি (মাঝারি)। 
  • দুধের তৈরি খাবার ইত্যাদি ১ বাটি। 
  • ভাত ৫ বাটি। 
  • ডাল ৩ বাটি (হালকা ঘন)। 
  • শাক (লাল শাক, মিষ্টি আলুর শাক) ১ বাটি। 
  • মাছ/ মাংস ৪-৫ টুকরা। 
  • ফলের রস ১-২ গ্লাস।
  • কলা/ আম (পাঁকা) ১টি (মাঝারি)। 
  • দুধ ১ গ্লাস।
  • খাবার তেল ৫ চা চামচ। 

<

p style=”text-align: justify;”>প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।

Previous

চোখের এলার্জি দূর করার উপায় এবং ঔষুধ

রাতে হাঁটার উপকারিতা জানেন কি?

Next

Leave a Comment