চোখের এলার্জি দূর করার উপায় এবং ঔষুধ

| | ,

শরীরের অন্যান্য অঙ্গে অ্যালার্জির মতো চোখে এলার্জি হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস বলা হয়। ধুলোবালি, সূক্ষ্ম ময়লা, রাসায়নিক পদার্থ বা খাবার থেকে চোখে এলার্জি হতে পারে।

চোখে এলার্জি হলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে চুলকানি ও অনবরত পানি পড়া, চোখে খচখচ অনুভব হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ সমূহ দেখা যায়। এই সকল লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া উচিত । পাশাপাশি চোখ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

চোখ পাতলা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। চোখে ঘন ঘন হাত দেওয়া যাবে না এবংবাইরে গেলে চোখে যেন ধুলাবালি না যায় তার জন্য সানগ্লাস পরতে হবে। যে সব খাবার খেলে এলার্জি হয় যেমন : ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, শেল ফিস, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো। সেই সকল খাবার কয়েক দিন এড়িয়ে চলতে হবে। যাদের সব সময় চোখে এলার্জির সমস্যা হয় তাদের খুব বেশি সচেতন থাকতে হবে।

চোখের এলার্জি দূর করার ঔষধ:

চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই অনেক বেশি কার্যকর । চোখের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় এ জন্য- অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তু থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন: আপনার যদি বাড়ীতে পোষা কোন প্রাণী থাকে তাহলে তার থেকে সতর্ক থাকবেন। সবচেয়ে ভালো হয় চোখে সানগ্লাস বা রোদচশমা করলে। চোখের এলার্জি দূর করার ঔষধ হিসেবে নিচের ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করতে পারেন। 

  • ২/৩ ফোঁটা গোলাপ জল অ্যালার্জি আক্রান্ত চোখে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখুন যেন জলটা চোখেথাকে কিছুক্ষন আর ইনফেকশন সারিয়ে তোলে।
  • ২ থেকে ৩ চা চামচ লবণ ১ গ্লাস পানিতে দিয়ে ২০ মিনিট ফুঁটিয়ে নিন । তারপর ঠান্ডা করে এক টুকরা পরিষ্কার তুলা দিয়ে আক্রান্ত চোখের কোণা ভালো ভাবে মুছতে হবে।

চোখের এলার্জির ট্যাবলেট:

যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হলে, চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন।  ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো ঔষধ সেবন এবং চোখে দেয়া ঠিক হবে না।চোখের এলার্জি দূর করার উপায় নিম্নে বর্ণিত ।

  • চোখের এলার্জি দূর করার ড্রপ সোডিয়ামক্রোমোগ্লাইকেট আইড্রপ এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস-এ কার্যকর যা দৈনিক ৩/৪ বার অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যবহারে এলার্জির বারবার সংক্রমণ রোধ করা যায়।
  •  কৃত্রিম চোখের পানি চোখের ড্রপ হিসেবে পাওয়া যায় যা চোখের ভেতর অবস্থানরত এলার্জেনকে দ্রবীভূত করে এবং পরবর্তীতে ধুয়ে ফেলে।
  • ডিকনজেসটেন্ট আইড্রপ যেমন ন্যাফাজলিন হাইড্রোক্লোরাইড এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসে অনেকাংশে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • এছাড়া লডঙ্মোইড, অলোপেটাডিন, পেমিরোলাস্ট ইত্যাদি আইড্রপ অনেকদিন চোখে ব্যবহারেও এলার্জির আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
  • এই রোগে কিটোটিফেন আইড্রপের কার্যকারিতাও প্রমাণিত হয়েছে যা স্টাফেন, প্রসমা, অ্যালারিড, কিটোমার ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়।
  • সাইকলোসপোরিন আইড্রপ (সাইপোরিন) এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসের অন্যতম সফল চিকিৎসা হিসেবে প্রমাণিত। এটা ব্যবহারে অতিরিক্ত এলার্জিতে ও স্টেরয়েড ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়।
  • খুব বেশি চুলকালে কেবল তখনই লোগ্রেড স্টেরয়েড যেমন ক্লুরোমিথোলোন আইড্রপ দৈনিক ৩/৪ বার ১-২ সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে বেশি দিন ব্যবহার করা যাবে না।
  • উপরোল্লিখিত চিকিৎসাগুলো ডাক্তার রোগীর চোখের এলার্জি অবস্থা বুঝে পরামর্শ দেবেন।

চোখের এলার্জির হোমিও চিকিৎসা:

এখানে চোখের সমস্যার জন্য শীর্ষ ৪টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের তালিকা দেওয়া হল-

Euphrasia –

  • তীব্র(Acute) শ্লেষ্মা(catarrhal) নেত্রপ্রদাহ ।
  • চোখ ঘন ঘন পানি আসে এবং চোখ মিটমিট করার প্রবণতা থাকে ।
  • চোখ থেকে জ্বালাকর স্রাব বের হয়, যাতে চোখের পাতার প্রান্তে ক্ষত হয়ে যায়।
  • কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার সাথে জ্বালাকর ঘন স্রাব নিঃস্বরণ হয়।
  • কর্নিয়ায় ফুস্কুড়ি বা স্ফুটক হয়।
  • বাতজনিত কারণে চোখের আইরিস প্রদাহসহ আংশিকভাবে চোখের পাতা প্যারালাইসিস (ptosis) এর ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে ভাল একটি অষুধ।
  • প্রায় সবসময়ই চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরতেই থাকে।
  • চোখের পাতা ফোলাসহ জ্বলা থাকে, যা খোলা বাতাসে ভাল অনুভব করে।
  • সন্ধ্যায়, গৃহমধ্যে , আলো, উষ্ণতায় বৃদ্ধি।
  • মুক্ত বাতাস , কফি পানে, অন্ধকারে হ্রাস পায়।
  • নেত্রপ্রদাহ সঙ্গে যুক্ত এলার্জিক রাইনাইটিস এর ক্ষেত্রে চোখ ও নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরাকে এলিয়াম সেপা (Allium cepa) সঙ্গে তুলনা করা যায়।
আরো দেখুনঃ   সকালের অভ্যাস যা আপনাকে করে তুলবে উৎফুল্ল ও কর্মদীপ্ত

Ambrosia –

  • এলার্জিজনিত চোখের সমস্যা।
  • চোখের পাতায় অসহনীয় চুলকানি।
  • চোখে হালকা ব্যথা এবং জ্বলাসহ পানি ঝরতে পারে এবং নাক থেকে রক্ত আসতে পারে।
  •  প্রায় সবসময় চোখের সমস্যার সঙ্গে বুকে সাঁইসাঁই শব্দসহ কাশি থাকে।
  • স্যাবাডিলা (Sabadilla), আরন্ডো (Arundo) সঙ্গে তুলনা করা যায়।

Ruta –

  • চোখ টনটনানিসহ মাথাব্যথা।
  • চোখে ব্যথাসহ লালচে গরম পানি আসে।
  • বিশেষ করে সূক্ষ্ম মুদ্রণ সেলাই বা পড়ার সাথে সম্পৃক্ত।
  • দৃষ্টিশক্তির সামঞ্জস্যের সমস্যা।
  • মাথা ব্যাথা সঙ্গে চোখ শ্রান্তি।
  • চোখের যন্ত্রণার সঙ্গে যুক্ত অত্যধিক দুর্বলতা (lassitude)।
  • চোখের উপর থেতলানো মত এবং চাপ অনুভূতি।
  • নেট্রাম মিউর (Natrum mur), আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম (Argentum nitricum) এর সঙ্গে তুলনীয়।

 Spigelia-

  • চোখে স্নায়ুবিক যন্ত্রনা।
  • চেপে ধরা মত ব্যথা যা এদেরকে ঘুরিয়ে ফেলে।
  • চরম আলোকাতঙ্ক থাকে।
  • গাঁটের ফোলা ও ব্যথাসহ চোখের প্রদাহ।
  • চোখের মধ্যে গভীরে এবং চোখের চারপাশে ব্যাথা অনুভব অর্থাৎ চোখের বলে চাপ দেওয়া মত অসহ্য যন্ত্রনা।
  • চোখের কোটরের অনুপাতে চোখ খুব বড় মনে হয়।
  • স্পর্শে অত্যন্ত সংবেদনশীল, মাথার চারপাশে শক্ত বন্ধনী দেওয়া আছে মনে হয়।
  • স্পর্শ, উত্তেজনা, গোলমাল বা কোলাহলপুর্ণ পরিবেশে এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি।
  • মাথা উচু করে শুয়ে থাকলে ভাল অনুভব করে।

 
এলার্জির চিকিৎসার ফল আস্তে আস্তে পাওয়া যায় সুতরাং এ ব্যাপারে ডাক্তারের সুপরামর্শ যেমন প্রয়োজন তেমনিই প্রয়োজন রোগীর ধৈর্য্য এবং ঔষধ ব্যবহারে নিয়মানুবর্তিতা। পরিশেষে বলতে হয় এলার্জির কারণে কখনো অন্ধত্ব হয় না। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে চোখের এলার্জি দূর করার উপায় এবং ঔষুধ  অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড সেবনই অন্ধত্বের মূল কারণ।

প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।

Previous

ইন্টারনেট আসক্তিতে যৌনতায় অনাগ্রহ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও গর্ভবতী নারীর যত্ন

Next

Leave a Comment