বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজন লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আজকের আলোচনা।
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামের চেয়ে শহরে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেশি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে এক সেমিনারে বাংলাদেশে লিভারের রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে চিকিৎসকদের সংগঠন হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশ।
সেমিনারে বলা হয় লিভার বিষয়ক রোগের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে হেপাটাইটিস ই।এছাড়া হেপাটাইটিস বি,সি এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও আগের তুলনায় বাড়ছে। সোসাইটির প্রেসিডেন্ট লিভার বিশেষজ্ঞ ডা.মাবিন খানের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা.শাহিনুল আলম বলেন,”বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজন হেপাটাইটিস ই,বি,সি এবং ফ্যাটি লিভারসহ লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ইদানীং হেপাটাইটিস বি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।”চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এই রোগে আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বলে জানান তিনি।
ডা.শাহিনুল বলেন,দেশের নগরাঞ্চলে লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। “অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় দেশের নগরাঞ্চলে হেপাটাইটিস ও লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। সমস্যা হচ্ছে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের নেই।”
সারা দেশে যকৃতবিদদের (হেপাটোলজিস্ট) সংখ্যা ১০০ জনেরও কম উল্লেখ করে এই লিভার বিশেষজ্ঞ বলেন,”বর্তমানে আমাদের একটি পৃথক সুপার স্পেশালাইজড ইন্সটিটিউট প্রয়োজন।আমাদের আজকের সেমিনারের এটাই উদ্দেশ্য। ” সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ডা.এম এ মালিক,ভাইরাস বিশেষজ্ঞ (ভাইরোলজিস্ট)ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BSMMU) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম, অস্টেলিয়া থেকে আগত লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কুমার বিশ্বনাথন, ফ্রান্স থেকে আসা লিভার বিশেষজ্ঞ রেলুকা পাইস,জাপানের অধ্যাপক হিরোনা ও ওকুবো,সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক গিলিম,ভারতের অধ্যাপক ডা.নাগেশ্বর রেড্ডি এবং ব্রিটিশ অধ্যাপক অনিতা ভার্মা প্রমুখ।
লিভার রোগের লক্ষণ:
লিভারে যে রোগগুলো সচারচার হয়, সেগুলো হলো: ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস), পিওথলরির বা পিত্তনালির রোগ, ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস ফোঁড়া, লিভার ক্যানসার ইত্যাদি।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, মদ্যপান, ধূমপান ইত্যাদি লিভারের ক্ষতি করে।
- চোখের ওপরে অংশে ব্যথা করা।
- যদি হঠাৎ করে খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা তৈরি হয়, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। কারণ, এটি লিভার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
- ঘন ঘন বমি হওয়া।
- খাওয়ার পর মুখে তেতো ভাব হওয়া ।
- ফেকাসে পায়খানা। তাছাড়া মল ও মূত্রের রং যদি হঠাৎ করে পাল্টাতে থাকে, তাহলে এখনই সাবধান হওয়া উচিত।
- টানা অবসন্নতা, ক্লান্তি ও বিষন্নতা।
- চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা হওয়া।
- পিত্তে সমস্যা।
- অর্শ্বরোগ এবং স্থায়ীভাবে বর্ধিত শিরা। এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- যদি আপনার চোখের সাদা অংশের রং এবং গায়ের চামড়া হলুদ হতে শুরু করে, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। কারণ, এটি জন্ডিসের লক্ষণ।
- যদি পেটের নিচের অংশ অস্বাভাবিক রকম ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিন একই অবস্থা থাকে। তাহলেএটি লিভারে পানি জমার লক্ষণ হতে পারে। একে লিভার কিরহোসিস বলা হয়।
- পাঁজরের একটু নীচে, পেটের ডান দিকে ব্যথা হলে সাবধান। এটি যকৃৎ বা লিভারের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
লিভার সমস্যা হলে কি হয়:
- খাবার পরে পেট ফাঁপা এবং পেট ভারী হয়ে যাওয়া।
-
খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা তৈরি হয়, ঘন ঘন বুক জ্বালা করা ।
-
পেট ব্যথা করা, সারাক্ষণ বমি বমি ভাব।
-
পেট ভার বোধ হওয়া এবং সঠিকভাবে খেতে অক্ষম।
-
অসময়ে ঘন ঘন খিদে পাওয়া এবং খাবারের পরে মাঝে মাঝে স্বল্প সময় ক্ষুধা পাওয়া, অনিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস।
-
ঘন ঘন বদহজম এবং অম্বল হওয়া ।
-
পাঁজরের একটু নীচে, পেটের ডান দিকে ব্যথা হওয়া।
- গায়ের চামড়া কোন জায়গায় খুব শুষ্ক হয়ে যায়, খোসা খোসা উঠতে থাকে।
- পেটের নিচের অংশ অস্বাভাবিক রকম ফুলে ওঠে।
প্রিয় পাঠক, আপনিও স্বাস্থ্য কথা অনলাইনের লেখক হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইল ,ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আমরাও আপনার উপর কৃতজ্ঞ থাকবো।