থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

| |

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজ বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

থানকুনি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি পাতার মধ্যে রয়েছে ওষুধি সব গুণ। এই পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে। খাদ্য উপায়ে এর সরাসরি গ্রহণ রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। অঞ্চলভেদে এই পাতাকে আদামনি, তিতুরা, টেয়া, মানকি, থানকুনি, আদাগুনগুনি, ঢোলামানি, থুলকুডড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, নামে ডাকা হয়। তবে বর্তমানে থানকুনি বললে সবাই চেনে।

থানকুনি পাতার উপকারিতা:

তেতো স্বাদের এই পাতা আমাদের শরীরের জন্য অসংখ্য উপকার বয়ে আনে। থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতার কথা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান).

১. চুল পড়ার হার কমে:

নানা সময়ে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। চুল পড়ার হার কমাতে আরেকভাবেও এই পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। কীভাবে? পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে কম করে ২ বার এইভাবে চুলের পরিচর্যা করলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!

২. টক্সিক উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়:

নানাভাবে সারা দিন ধরে একাধিক ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে ও রক্তে প্রবেশ করে। এইসব টক্সিন যদি সময় থাকতে থাকতে শরীর থেকে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! আর এই কাজটি করে থাকে থানকুনি পাতা। কীভাবে করে? এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ এই পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

৩. ক্ষতের চিকিৎসা করে:

থানকুনি পাতা শরীরে উপস্থিত স্পেয়োনিনস এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান ক্ষতের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এবার থেকে কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেঁটে লাগিয়ে দিবেন। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতারও উন্নতি করে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

৫. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:

থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিকাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

আরো দেখুনঃ   কিডনি রোগ নীরব ঘাতক !!

৬. আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর হয়:

এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে এইপাতা খেতে হবে। এমনটা টানা ৭ দিন যদি করতে পারেন, তাহলেই
কেল্লাফতে! এই ধরনের সমস্যা কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান। এই মিশ্রনটি দু চামচ করে, দিনে দুবার খেলেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।

৭. পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে:

অল্প পরিমাণ আম গাছের ছালের সঙ্গে ১ টা আনারসের পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো এই পাতা ভাল করে মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিন। এই মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যেকোন ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়। সেই সঙ্গে কৃমির প্রকোপও কমে।

৮. কাশির প্রকোপ কমে:

২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে কাশির কোনও চিহ্নই থাকবে না।

৯. জ্বরের প্রকোপ কমে:

সিজন চেঞ্জের সময় যারা প্রায়শই জ্বরের ধাক্কায় কাবু হয়ে পারেন, তাদের তো এই পাতা খাওয়া মাস্ট! কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরে যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।

১০.গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়:

অসময়ে খাওয়ার কারণে ফেঁসেছেন গ্যাস্ট্রিকের জালে? নো প্রবেলম! থানকুনি পাতা কিনে আনুন বাজার থেকে। তাহলেই দেখবেন সমস্যা একেবারে হাতের মধ্যে চলে আসবে। আসলে এক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া চিকিৎসা দারুন কাজে আসে। কী সেই চিকিৎসা? হাফ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিছরি এবং অল্প পরিমাণে এই পাতার রস মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। তারপর সেই মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা এক সপ্তাহ করলেই দেখবেন উপকার মিলবে।

থানকুনি পাতার অপকারিতা:

থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষন জানলাম এখন অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। থানকুনিতে কোনো ধরণের বিষাক্ততা পাওয়া যায় নাই। তবে এই পাতা পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া উচিত না। নিম্নে সমস্যা গুলি তুলে ধরা হলো।

  • ত্বকের এলার্জির সাময়িক সমস্যা হতে পারে
  • শরীরের চামড়া জ্বালা পুড়া করতে পারে।
  • মাথাব্যথার সমস্যা হতে পারে
  • পেট খারাপ হতে পারে
  • মাথা ঘোরা হতে পারে
  • অতিরিক্ত ঘুম আসা

দ্রষ্টব্য– গর্ভাবস্থায় এটি সেবন করলে গর্ভপাত হতে পারে তাই গর্ভাবস্থায় এইগুলি এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও, স্তন্যদানকারী মহিলাদের থানকুনি পাতার ক্ষতি এড়াতে না খাওয়া এবং ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

FAQ:

প্রশ্নঃ থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয় ?

উত্তরঃ ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে। কারণ থানকুনিতে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোক্যামিকেল। তাছাড়া ত্বকের আদ্রতা দূর করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগায় ।

প্রশ্নঃ থানকুনি পাতায় কি কি ভিটামিন আছে?

উত্তরঃ পুষ্টি এবং যৌগ ধারণ করে যা স্বাস্থ্য উপকারে অবদান রাখে। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল, যা ফ্রীরাডিক্যালের কারণে কোষকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই পাতায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজও রয়েছে। যদিও এগুলি ভিটামিনের প্রাথমিক উৎস নাও হতে পারে।

প্রশ্নঃ থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়?

উত্তরঃ প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে। আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায় তাছাড়া সারাদিন প্রফুল্ল হয় । সকাল-সকাল খালি পেটে থানকুনি পাতার রস অথবা চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় আপনি যেমন ভাবে ইচ্ছে খেতে পারেন। তবে থানকুনি পাতার পেস্ট, শরবত , বড়া , শাক অথবা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন।

আরো দেখুনঃ   ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় কিছু বিষয়সমূহ
Previous

সজনে পাতার উপকারিতা ও বিষ্ময়কর ঔষধি গুণ

বাংলাদেশের প্রবীণদের সমস্যা | বার্ধক্য জনিত সমস্যা

Next

Leave a Comment